স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উদ্যোক্তাদের বাজার সুবিধানির্ভর প্রতিযোগিতা থেকে সরে এসে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও দক্ষতানির্ভর প্রতিযোগিতায় মনোযোগ দিতে হবে। প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে হবে সরকারকে।
উত্তরণ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। যতটুকু সুবিধা হারাবে তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নীতিগত সহায়তা দিতে হবে।
প্রস্তুতিপর্বে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।
সক্ষমতা বাড়াতে হলে ব্যবসার সময় ও খরচ কমিয়ে আনা জরুরি। এর জন্য দেশে ব্যবসা শুরুর প্রক্রিয়া, নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুৎ প্রাপ্তি, সম্পত্তি নিবন্ধন, ঋণপ্রাপ্তি, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর স্বার্থরক্ষা, কর পরিশোধ, সীমান্ত বাণিজ্য চুক্তি কার্যকর, দেউলিয়াত্ব মীমাংসা এবং আইনের সাংঘর্ষিক দিকগুলোর সংস্কার ও উন্নয়নের পাশাপাশি সড়ক, নৌ, সমুদ্র ও আকাশপথের যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন করতে হবে। পাশাপাশি বন্দর ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সরকারের দেয়া এসব সুবিধা ভোগ করে উদ্যোক্তাদেরও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর বিষয়ে তাগিদ থাকতে হবে। ব্যবসায় ই-কমার্স ও প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি উদ্যোক্তা, ব্যবস্থাপনা, শ্রমিকসহ সবার দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে সমন্বয় করে কম সময়ে এবং কম খরচে বেশি পরিমাণ উৎপাদনের যোগ্যতা অর্জন করা।
পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ছাড়া উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন হবে। এ জন্য বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে। এটি দেশে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, দক্ষতার উন্নয়ন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও উৎপাদিত পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার বেশ বড়। বিনিয়োগের সুযোগসুবিধা এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতা ও চাহিদা তুলনামূলক বেশি। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের আওতায় বেশি করে বিদেশি বিনিয়োগ আনার চেষ্টা করতে হবে।
এখানে উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় চাহিদা পূরণ করতে পারলে অযাচিতভাবে বিদেশি পণ্য আমদানির প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে অতিরিক্ত পণ্য রপ্তানিও করা যাবে। তা ছাড়া বিদেশি পুঁজি ও শ্রমের উৎপাদনশীলতা বেশি। এর মাধ্যমে দেশে উদ্যোক্তা-শ্রমিকের মধ্যে দক্ষতা স্থানান্তরও সহজ হবে।
তবে এসব সুবিধা পেতে হলে অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো বাস্তবায়নে সরকারকে জোরদার পদক্ষেপ নিতে হবে। যত দ্রুত এগুলোর কাজ শেষ করা যাবে, বিদেশি বিনিয়োগ তত দ্রুত আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে।
উত্তরণজনিত কারণে বাজারসুবিধা হারানোর পাশাপাশি ওষুধ খাতে মেধাস্বত্ব সুবিধাও থাকবে না। এর ফলে সম্ভাব্য বিপর্যয় প্রতিরোধে এ-সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান সংস্কার ও পরিবর্তন দরকার। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি কোম্পানির উৎপাদনের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ মার্কেটে ওষুধের সরবরাহ বাড়িয়ে দাম সহনীয় রাখার কৌশল থাকতে হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাকের প্রবেশে ট্যারিফ মূল্য বেশি। প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে টিকে থাকতে হলে এ খাতে সরকারের নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। তবে রপ্তানি পণ্যের পরিধি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে রপ্তানিযোগ্য এমন পণ্য খুঁজতে হবে, যার বৈশ্বিক চাহিদা বেশি হলেও সরবরাহ কম; ট্যারিফ মূল্যও কম। এ ধরনের পণ্য বেশি উৎপাদন ও বাড়তি মূল্য সংযোজন করতে পারলে বাজার সুবিধাজনিত রপ্তানির ক্ষতিও কমে আসবে।
শিল্পায়ন ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উদ্যোক্তাদের উপযুক্ত পরিবেশের (কমপ্লায়েন্সের) দিকে বাড়তি নজর দেয়ার সময় এসেছে। উত্তরণের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রেতা-ভোক্তা এবং প্রতিযোগীদের কঠোর দৃষ্টি থাকবে রপ্তানিকৃত পণ্যের অরিজিনের ওপর।
সেখানে বিবেচনায় আসবে উৎপাদকের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, শ্রমের ন্যায্যতা, কাজের সহায়ক পরিবেশসহ নানা দিক। কোনো একটি ক্ষেত্রে কেউ অসন্তুষ্ট হলে ঘনঘন আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে। কমপ্লায়েন্স ক্যাটাগরি ঠিক থাকলে এ সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার প্রয়োজন হবে না। উলটো পণ্যের ন্যায্য দামও নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
এ-সংক্রান্ত সম্ভাব্য ঝামেলা এড়াতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় চুক্তি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে উদ্যোক্তার সমঝোতা চুক্তি করতে হবে। তবে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য দর কষাকষির সুযোগ থাকতে হবে।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান: সিপিডির সম্মানীয় ফেলো
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহ আলম খান
আরও পড়ুন:আজ, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, আনুমানিক দুপুর ২:১৫ মিনিটের সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো এলাকায় আকস্মিকভাবে আগুনের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পরপরই বিমানবন্দর ফায়ার সেকশন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফায়ার ইউনিট এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সম্মিলিতভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কার্যক্রম শুরু করে।
বিমানবন্দরের সকল ফ্লাইট অপারেশন বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে।
সকলকে নিরাপদ এবং সচেতন থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কার্যক্রম শেষে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রদান করা হবে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজের একটি অংশে আগুন লেগেছে। তবে ফ্লাইট ওঠানামা স্বাভাবিক রয়েছে।
আজ শনিবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ২টা ৩৪ মিনিটের দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরের দিকে রওনা হয় পাঁচটি ইউনিট। তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।
প্রকৃতিতে এখন হেমন্তকাল চলছে। শীত আসার আগে এ সময়টায় ত্বকের সাথে সাথে অনেকের ঠোঁটেও দেখা দেয় রুক্ষতা। এ কারণে শীত আসার আগেই ঠোঁটের নিয়মিত যত্ন নেওয়া জরুরি। যাদের এখন থেকেই ঠোঁট ফাটছে বা শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে তারা ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। যেমন- অলিভ অয়েল ও চিনির স্ক্রাব: এক চা চামচ অলিভ অয়েল, এক চা চামচ চিনি এবং আধা চা চামচ বেসন মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট ঠোঁটে মেখে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ভেজা হাতে ম্যাসাজ করে তুলে ফেলুন। এটি সপ্তাহে দু-এক দিন করতে পারেন।
নারকেল বা ভিটামিন ই তেল: রাতে ঘুমানোর আগে ঠোঁটে নারকেল তেল বা ভিটামিন ই অয়েল লাগিয়ে ঘুমাতে পারেন। সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। এতে ঠোঁটে আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
বিটরুট ও গোলাপের ভ্যাসলিন: বিটরুটের রস এবং গোলাপের পাপড়ি একসঙ্গে জ্বাল দিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। ঠান্ডা হলে ভ্যাসলিনের সাথে মিশিয়ে রাখুন। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে ঠোঁট নরম থাকবে।
দৈনন্দিন যত্ন
নিয়মিত ভ্যাসলিন/লিপজেল ব্যবহার: শীতকালে ঠোঁটকে নরম ও কোমল রাখতে নিয়মিত ভ্যাসলিন বা ভালো মানের লিপজেল ব্যবহার করতে পারেন।
পর্যাপ্ত পানি পান: শরীরকে সতেজ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জরুরি।
ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার: ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা ঠোঁটের ক্ষতি করতে পারে।
সূর্যের আলো থেকে সুরক্ষা: বাইরে বেরোনোর সময় এসপিএফ যুক্ত লিপবাম ব্যবহার করুন। তা না হলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ঠোঁটের ক্ষতি করতে পারে।
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় জুঁইদন্ডী ইউনিয়নে রাতে 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান সহ ৬৮ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাত পৌনে ৯টার দিকে উপজেলার জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজারে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা হাতে লাঠি, ইটপাটকেল, রড, দা, কিরিচ নিয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। তারা বাজার এবং আশেপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ করছিলেন।
পুলিশ খবর পেয়ে রাত ৯টা ৫ মিনিটে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা পালিয়ে যায়। পুলিশ আব্দুল কাদের, আব্দুল খালেক ও মো. আরিফ নামে তিনজনকে আটক করে। পাশাপাশি ২০টি কাঠের লাঠি, ১০টি আফলা ইটের খোয়া, ২টি দেশীয় তৈরি লোহার দা এবং ৮টি লোহার টুকরা জব্দ করা হয়।
এঘটনায় সন্ত্রাসীবিরোধী আইনে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ছোট ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব রিদুওয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েম সহ ৬৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৬০/৭০ জনের নামে মামলা করেছে থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, জুঁইদন্ডীতে 'জয় বাংলা' স্লোগান দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য ৬৮ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। গ্রেফতার ৩ জনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্যদের আটকের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদ চত্বরে গড়ে উঠেছে ‘পাখি কলোনি’। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পাখিদের জন্য গাছে গাছে বাঁধা হচ্ছে মাটির হাঁড়ি, আর শান বাঁধানো পুকুরে বসানো হয়েছে আড়ানী। উদ্দেশ্যে প্রকৃতির পরম সহচর এসব পাখির জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের নিশ্চয়তা তৈরি করা।
উপজেলা চত্বরে পাখির কলরবে দীর্ঘদিন পর যেন ফিরে পেয়েছে প্রকৃতির নিজস্ব ছন্দ, প্রাণ ফিরে পেয়েছে পরিবেশের হৃদস্পন্দন। এখন মাটির হাঁড়িতে বাসা বাঁধবে শালিক, দোয়েল, বাবুই, টুনটুনিসহ নানা প্রজাতির দেশীয় পাখি। পুকুরের নিস্তরঙ্গ জলে ভাসছে আড়ানী, ঝিকমিক করছে রোদে মাছের খেলা।
উপজেলা পরিষদে পাখি কলোনি দেখতে এসেছেন শাহিনুর ইসলাম। তিনি বলেন, পাখির কূজনে এখানের পরিবেশটাই যেন পাল্টে গেছে। পাখি কলোনি দেখে খুব ভালো লাগছে।
স্থানীয় পরিবেশ কর্মী এম রাসেল আহমেদ বলেন, যেখানে মানুষ পাখি তাড়ায়, সেখানে তাদের জন্য ঘর বানানো হচ্ছে। এটি শুধু পরিবেশ প্রকল্প নয়, এটি সহানুভূতির প্রতীক। পাখি বাঁচলে প্রকৃতি বাঁচবে, আর প্রকৃতি বাঁচলেই মানুষ টিকে থাকবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান বলেন, পাখি কৃষির নীরব সহযোগী। তারা মাঠের ক্ষতিকর পোকার শত্রু। এই উদ্যোগ কেবল পরিবেশ নয়, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষাতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আল জিনাত বলেন, পাখি প্রকৃতির প্রাণ। আমরা এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই যেখানে গাছ, মানুষ ও পাখি একসঙ্গে টিকে থাকবে। উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই উদ্যোগ শুধু পাখিদের আশ্রয় নয়, এটি প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি আমাদের নৈতিক দায়বদ্ধতা। মূলত পাখি কলোনির উদ্দেশ্য একটি মানবিক, প্রাণবন্ত ও সবুজ পৃথিবীর প্রত্যাশায় পাখির কূজনের মধ্যেই আমরা প্রকৃতির হাসি শুনতে চাই।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আহত ও শহীদ পরিবারের প্রতি অসম্মান করা হয়েছে অভিযোগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, শহীদ পরিবার অনুষ্ঠানে প্রাপ্য সম্মান পাননি বরং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করা হয়েছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
আখতার হোসেন বলেন, শহীদ পরিবাররাই জুলাই সনদ আয়োজনের মূল আকর্ষণ হলেও, তাদের মঞ্চ থেকে দূরে সরিয়ে বসিয়ে অমর্যাদা করা হয়েছে। আহতদের ওপর হামলা চালিয়ে এবং অসম্মান করে জুলাই সনদকে ‘পাওয়ার এলিট’-এর সেটেলমেন্ট বানানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শুক্রবার জুলাইয়ের শহীদ পরিবার ও আহতরা কিছু দাবি নিয়ে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্যবদ্ধ কমিশন জুলাই সনদের অঙ্গীকারের পঞ্চম দফা সংশোধনের ঘোষণা দিলেও, শুরুতে যদি বিষয়টি আমলে নেওয়া হতো তাহলে তাদের রাজপথে নামতে হতো না।
তিনি বলেন, সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধান না করে আহত যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি করছি।
এনসিপি সদস্য সচিব আরও বলেন, জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ও বৈধতা নিশ্চিত না করেই এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিকে পরিষ্কার ধারণা না দিয়েই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে। জুলাই সনদের কোনো আইনভিত্তি না দেওয়া, বাস্তবায়ন আদেশ প্রকাশ না করা এবং পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা জাতির সামনে না আনার কারণে আমরা আনুষ্ঠানিকতার জন্য স্বাক্ষর থেকে বিরত থেকেছি।
তিনি বলেন, এনসিপি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ৭২ সালের বন্দোবস্ত বিলোপ করে নতুন সাংবিধানিক অগ্রযাত্রায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। বিচার সংস্কারের অংশ হিসেবে জুলাই সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবিতে সারাদেশে ‘জুলাই পথযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করেছে এনসিপি। রাজধানী থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জনগণ এই দাবিতে এনসিপিকে দৃঢ় সমর্থন দিয়েছে। একই সঙ্গে আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কারে জোরালো ভূমিকা রেখেছি।
আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে জাতিকে ধোঁয়াশায় রাখা হয়েছে। সনদের আইনিভিত্তি হিসেবে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’-এর উল্লেখ নেই। আমরা বলেছি, অভ্যুত্থান-পরবর্তী যেকোনো বন্দোবস্তের নৈতিক ও আইনিভিত্তি থাকতে হবে। কিন্তু সনদে জনগণের সার্বভৌম ও গাঠনিক ক্ষমতার প্রকৃত মৌলিক সত্যের কোনো উল্লেখ নেই।
তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদের আওতাভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানের এমন কিছু অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে, যা বিদ্যমান সংবিধানের তথাকথিত বেসিক স্ট্রাকচারের আওতাভুক্ত। ফলে ৭২ সালের সাংবিধানিক কাঠামোর অধীনে থেকে এই পরিবর্তনগুলো ভবিষ্যতে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এতে জুলাই সনদ জনগণের সঙ্গে একটি সাংবিধানিক প্রতারণায় পরিণত হবে।
এ কারণে এনসিপি সরকারপ্রধান ড. ইউনূসকে গণভোটের পূর্বে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ জারির আহ্বান জানিয়েছে—যাতে এর আইনভিত্তি, বৈধতা ও জুলাই অবস্থান স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে।
শেষে আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদের আইনিভিত্তি নিয়ে আগামী কয়েকদিনের আলোচনায় আমরা জনগণের পাশে থাকব। কোনো অবস্থাতেই জুলাই সনদকে জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো আইনিভিত্তিহীন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল বা ‘জেন্টলম্যানস অ্যাগ্রিমেন্টে’ পরিণত করা যাবে না। আমরা আশা করছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের ইচ্ছাকে ধারণ করে জুলাই সনদের আইনিভিত্তি ও বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, সর্বস্তরের শিক্ষকদের জন্য আমাদের অগ্রাধিকার হলো যুক্তিসংগত আর্থিক সুবিধার নিশ্চয়তাসহ চাকরির নিরাপত্তা, শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সামাজিক মর্যাদা এবং তাদের অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও রাজনীতির সংস্কার কিংবা নাগরিক উন্নয়নে যত উদ্যোগই নেওয়া হোক না কেন, শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং শিক্ষকদের আর্থসামাজিক নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত না হলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া সম্ভব নয়।
বিএনপি মহাসচিব জানান, জনগণের ভোটে বিএনপি আবারও রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে রাষ্ট্রের সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বৃদ্ধি, চাকরি স্থায়ীকরণ এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করা হবে।
মির্জা ফখরুল সতর্ক করে বলেন, শিক্ষকদের যুক্তিসংগত আন্দোলনকে পুঁজি করে পতিত স্বৈরাচারের সহযোগীরা যদি পরিকল্পিত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালায় কিংবা আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক উত্তরণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়, তবে বিএনপি কোনো ধরনের নমনীয়তা প্রদর্শন করবে না।
মন্তব্য